অনলাইন খবর ডটকমঃ
মুখে দুর্গন্ধ একটি প্রচলিত সমস্যা। বিভিন্ন কারণে মুখে দুর্গন্ধ হয়। মুখের দুর্গন্ধের প্রধান কারণ কী জানেন। এ সমস্যা কেন হয় এবং প্রতিরোধে কী করা যায়, এ বিষয়ে কথা বলেছেন ইউনিভার্সিটি ডেন্টাল কলেজ হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক ডা. মাহমুদ আলম। আজ ৫ নভেম্বর, এনটিভির স্বাস্থ্য প্রতিদিনের ২১৯৬ পর্বে অনুষ্ঠানটি প্রচারিত হয়।
প্রশ্ন : মুখের দুর্গন্ধ তো রীতিমতো সামাজিক সমস্যা হয়ে দাঁড়ায় মাঝেমধ্যে। যাঁর এই সমস্যা আছে, তিনি নিজেও খুব জটিল অবস্থার ভেতর দিয়ে যান। মুখের দুর্গন্ধের প্রধান কারণ কী?
উত্তর : আমরা অনেককেই দেখি, কথা বলতে গিয়ে মুখে রুমাল চেপে যাচ্ছে। অথবা দেখা যাচ্ছে হাত দিয়ে ঢেকে কথা বলছে। অথবা কথা বলতেই চাইছে না, এমনই অবস্থা! কারণ, সে নিজে নিজেই আতঙ্কগ্রস্ত যে মুখে গন্ধ হচ্ছে বা শ্বাস-প্রশ্বাসে গন্ধ আসছে। একে আমরা চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় বলি হেলিটোসিস। সঠিকভাবে দাঁত ব্রাশ না করা হলে দাঁতে ক্যারিজ হয় বা দাঁতে গর্ত হয়ে যায়। এখানে অনেক সময় খাবার জমে থাকে। এই খাবার জমে, পচে প্লাক সৃষ্টি করে এবং জিহ্বার ওপরও এক ধরনের আবরণ পড়ে যায়। এতে দুর্গন্ধ সৃষ্টি হয়।
এ ছাড়া বেশ কিছু খাবারের কারণেও দুর্গন্ধ মুখে চলে আসে। যেমন—পেঁয়াজ, রসুন। এই গন্ধ বেশ কিছুক্ষণ থেকে যায়। আবার কেউ যদি ধূমপান করে, সে ক্ষেত্রেও গন্ধটা রয়ে যায়। পান-সুপারি বা তামাকজাত দ্রব্য সেবনের কারণেও মুখে দুর্গন্ধ হয়।
কিছু পদ্ধতিগত (সিস্টেমিক) অসুখের কারণেও মুখে সমস্যা হয়। যেমন—রেসপিরেটরি ইউট্রাক্ট ইনফেকশন, ব্রঙ্কাইটিস বা নিউমোনিয়া; সে ক্ষেত্রেও মুখে গন্ধ হতে পারে। আবার ডায়াবেটিস থাকলে মুখে দুর্গন্ধ হতে পারে। লিভারের সমস্যা থাকলেও হতে পারে। এ ছাড়া যাদের গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা থাকে, তাঁদেরও এটি হতে পারে। অনেক কারণ রয়েছে মুখে দুর্গন্ধ হওয়ার।
প্রশ্ন : কী কারণে মুখের দুর্গন্ধ হচ্ছে সেটি কি বোঝার উপায় আছে রোগীদের ক্ষেত্রে? নাকি কেবল বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে গেলেই বোঝা যাবে?
উত্তর : বাইরে থেকে তো রোগী বুঝতে পারবেন না যে কী কারণে সমস্যাটি হচ্ছে। এটাই স্বাভাবিক। অবশ্যই দন্ত চিকিৎসকের কাছে আসতে হবে। তখনই জানা যাবে আসল কারণ।
প্রশ্ন : এ জাতীয় সমস্যা নিয়ে রোগীরা আপনাদের কাছে এলে প্রথমে কী দেখেন?
উত্তর : দেখা গেল হয়তো ব্যক্তির মুখে অনেক প্লাক জমে আছে। সে ঠিকমতো দাঁত ব্রাশ করেনি। অথবা ভুলভাবে দাঁত ব্রাশের কারণেও এ সমস্যা হয়ে যায়। খাবার জমে থাকলে তো হবেই। এ ছাড়া যখন দেখা যায়, স্থানীয় (লোকাল) কোনো কারণ নেই, তখন পদ্ধতিগত রোগের কারণে হচ্ছে কি না, সেটি দেখতে হয়। প্রধানত দেখা যায়, স্থানীয় কারণগুলোই সব সময় বেশি থাকে রোগীর ক্ষেত্রে।
প্রশ্ন : যে কারণেই সমস্যা হোক না কেন, সাধারণত চিকিৎসা কীভাবে শুরু করেন?
উত্তর : প্রথমেই আমরা স্কেলিং ও পলিশিং করি। এতে মুখকে পুরোপুরি পরিষ্কার করে নেওয়া হয়। রোগীকে মাড়ি ম্যাসাজ করার পরামর্শ দেওয়া হয়। এর পর রোগীকে কিছুদিন পর আবার চেকআপ করতে আসার জন্য বলা হয়।
প্রথমে স্কেলিং, পলিশিং ও জিহ্বা পরিষ্কার করতে বলা হয় তাকে। এসিডিটি থাকলে ওষুধ দিয়ে চিকিৎসার কথা বলা হয়, ডায়াবেটিস থাকলে সেটি নিয়ন্ত্রণের পরামর্শ দেওয়া হয়। অনেক সময় দেখা যায়, ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীদের মুখ শুষ্ক থেকে যায়। ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীরা যেহেতু স্যালাইভা উৎপন্ন করতে পারে না, তাই এ দুর্গন্ধ চলে আসে।
প্রশ্ন : আপনি বলছিলেন স্কেলিং ও পলিশিংয়ের পরামর্শ দেওয়ার কথা। এর পর কি আরো সমস্যা হতে পারে? আপনারা আর কী কী পরামর্শ দেন?
উত্তর : শুধু স্কেলিং বা পলিশিং নয়, আমরা সেখানে দেখি কোনো গর্ত আছে কি না। যেখানে খাদ্যকণা আটকে থাকছে, অথচ সে বের করতে পারছে না। তাই এ রকম হলে আমরা গর্তটি ঠিক করার চেষ্টা করি।
আবার অনেকের ক্ষেত্রে দেখা যায়, আক্কেল দাঁতের সমস্যা। অনেকের আঁকাবাঁকা দাঁত থাকে। যতই চেষ্টা করুক, ময়লা বা খাবারের কণা বের করতে পারে না। সে ক্ষেত্রে যদি দেখি আক্কেল দাঁত অস্বাভাবিক অবস্থায় রয়েছে, তখন বলি এটি তুলে ফেলেন, যেহেতু আক্কেল দাঁতের তেমন কোনো কাজ নেই। অনেক রোগী আবার শুনে ভয় পায়। বলে, কেন আমি দাঁত ফেলে দেব? তখন তাদের বলা হয়, যেহেতু দাঁতটির কোনো কাজ নেই, এখানে খাদ্যকণা আটকে মুখে আরো বেশি দুর্গন্ধ হতে পারে।
প্রশ্ন : মুখের দুর্গন্ধ প্রতিরোধে সব সময় কী করণীয়?
উত্তর : প্রথম কথা হলো, সঠিকভাবে দাঁত ব্রাশ করতে হবে দিনে দুবার। রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে অবশ্যই দাঁত ব্রাশ করে ঘুমাতে হবে এবং সকালে নাশতা খাওয়ার পর অবশ্যই দাঁত ব্রাশ করতে হবে। দাঁত ব্রাশের সঠিক পদ্ধতিও জানতে হবে; গুণগত মানের পেস্ট ব্যবহার করতে হবে।
প্রশ্ন : অনেকে রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে দাঁত ব্রাশ করছে। আবার সকালে ঘুম থেকে উঠেই দাঁত ব্রাশ করছে। এ বিষয়টি নিয়ে একটু দ্বিধা রয়েছে। এ বিষয়ে আপনি কী মনে করেন?
উত্তর : আসলে সকালবেলা নাশতা খাওয়ার পর দাঁত ব্রাশ করা ঠিক। কারণ, হয়তো রাতে দাঁত ব্রাশ করে ঘুমাতে গেল সে। এ ক্ষেত্রে তো আর কোনো খাবার কণা আটকে নেই; ব্যাকটেরিয়া আক্রমণের আশঙ্কা নেই। তবে দেখা যাচ্ছে, সকালে উঠে আবার দাঁত ব্রাশ করছে। যদি সকালে উঠে আবার ব্রাশ করে, তবে ধীরে ধীরে দাঁত ক্ষয়ের দিকে চলে যাবে ভুল ব্রাশ করার জন্য। এ জন্য বলা হয়, সকালে অবশ্যই নাশতা খাওয়ার পর দাঁত ব্রাশ করবেন। এর পর অনেকটা সময় আর দাঁত ব্রাশের দরকার পড়ে না।
আর যদি দেখা যায় দাঁতের ফাঁকের ময়লা বা খাদ্যকণা বের করতে পারছেন না, সে ক্ষেত্রে ডেন্টাল ফ্লস বা নাইলন সুতা সেটি ব্যবহার করতে পারেন। অথবা টুথপিক ব্যবহার করতে পারে। একই সঙ্গে মাড়ি ম্যাসাজ করতে হবে এবং মাউথওয়াশ ব্যবহার করতে হবে।
প্রশ্ন : নিয়মিত মাউথওয়াশ ব্যবহার করার প্রয়োজনীয়তা কী?
উত্তর : মাউথওয়াশ দুর্গন্ধ রোধে ও ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশন রোধে রক্ষা করবে। তবে টানা তিন মাসের বেশি মাউথওয়াশ ব্যবহার করা উচিত নয়।
প্রশ্ন : মাউথ ব্রেথনার বা ব্রেথ ফেশনার বলে কিছু পণ্য রয়েছে বাজারে। মুখের দুর্গন্ধ রোধে এগুলো কি ভালো ভূমিকা রাখতে পারে?
উত্তর : তেমন কার্যকর নয়। তবে হালকা সময়ের জন্য দুর্গন্ধ দূর করে। আরেকটি পরামর্শ হলো, সুগার ফ্রি চুইংগাম মুখে রাখা যেতে পারে। এতে মুখের দুর্গন্ধ কিছুটা হলেও কমে যায়।
প্রশ্ন : যদি এ জাতীয় সমস্যা বেশি দিন থাকে, তাহলে কী কী জটিলতা হতে পারে?
উত্তর : লোকাল ও সিস্টেমিক কারণে মুখে দুর্গন্ধের সমস্যা হয়। যদি লোকাল কারণে প্লাক জমে যায়, তাহলে আগে আগে দাঁত পড়ে যাবে। প্লাক জমতে জমতে একপর্যায়ে স্টোন হবে বা ক্যালকুলাস হবে। দাঁত থেকে মাড়ি ধীরে ধীরে সরে যাবে। সে ক্ষেত্রে দাঁত নড়ে যাবে। প্লাক, ক্যালকুলাস এবং মুখে দুর্গন্ধ একটির সঙ্গে আরেকটি জড়িত।
সিস্টেমিক রোগের বেলায় ব্রঙ্কাইটিস বা নিউমোনিয়া—এসবের ক্ষেত্রে রোগীকে সাবধান থাকতে হবে। ডায়াবেটিস থাকলে একে অবশ্যই নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। যদি শুষ্ক মুখ হয়, যেটি জেরোস্টোমিয়া, এর সঠিক চিকিৎসা নিতে হবে।
প্রশ্ন : কী চিকিৎসা রয়েছে এ ক্ষেত্রে?
উত্তর : স্যালাইভা বা লালা আরো বেশি তৈরি হতে হবে। সে ক্ষেত্রে আমরা টকজাতীয় খাবারও অনেক সময় পরামর্শ দিয়ে থাকি। এ ছাড়া ওষুধ থাকে, কৃত্রিম স্যালাইভা থাকে—এগুলো দেওয়া হয়।
প্রশ্ন : ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে মুখে কীভাবে যত্ন নিতে হবে?
উত্তর : প্রথমে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীকে সুগার ফ্রি সবকিছু খেতে বলি। সুগার ফ্রি খাদ্য না খেলে মুখে গন্ধটা হয়।
The post মুখের দুর্গন্ধের প্রধান কারণ কী জানেন appeared first on Online Khobor.